Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Archaeological

সিলেট জেলার পুরাকীর্তিসমূহ

 

মণিপুরি রাজবাড়ী

মণিপুরি সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মণিপুরি রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণশৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সু প্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারম্নকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মণিপyুর রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংসস্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মণিপুরি সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে রাজবাড়ীটি স্থাপিত হয়। তৎকালীন মণিপুরি রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিং, মার্জিত সিং ও গম্ভীর সিং রাজবাড়ীটি তৈরী করে এখানে বসবাস করেন। পরে চৌর্জিৎ সিং ও মার্জিত সিং কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকায় বসতি স্থাপন করলেও রাজা গম্ভীর সিং থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। ১৮২৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় বার্মার সাথে যুদ্ধ করে মণিপুর রাজ্য পুরম্নদ্ধারের আগ পর্যমত্ম রাজা গম্ভীর সিং সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন। ইতিহাসে মণিপুরিদের কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয় ১৮১৯-১৮২৬ সাল পর্যমত্ম । ১৮২২ সালে মণিপুরি রাজ্যের সাথে বার্মার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। অসংখ্য মণিপুরি পরিবার নিজ আবাসভূমি ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজা চৌর্জিৎ সিংও কাছাড়ে পালিয়ে যান। রাজ্যভার গ্রহণ করেন তার সহোদর মার্জিত সিং। এক পর্যায়ে মার্জিত সিং বার্মিজদের কাছে পরাস্থ হন। পরিশেষে চৌর্জিৎ, মার্জিত ও গম্ভীর তিন ভাই একত্রে পুনরায় চলে আসেন মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসকদের আশ্রয়ে এখানেই বসতী স্থাপন করেন। ব্রিটিশ সরকারের অনুরোধে সিলেটে সশস্ত্র খাসিয়াদের দমনে মণিপুরি লেভী (সৈন্যবাহিনী) গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদিকে, সিলেটে দীর্ঘদিন অবস্থানের সুবাদে মণিপুরিদের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা দিক এ অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যা এখনো প্রতীয়মান হয় মণিপুরি নৃত্য, গান ও পোষাক ছাড়াও সিলেটের কৃষ্টি সংস্কৃতিতে।

মণিপুরি সম্প্রদায়ের ইতিহাস-আবেগ-অনুভূতির অন্যতম স্থান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীর সংস্কারের জন্য আজ অবধি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। রাজা কর্তৃক নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশের কোনো অসিত্মত্ব নেই। উপরন্তু রাজবাড়ীর সামনে অপরিকল্পিতভাবে মন্দির নির্মাণ করে রাজবাড়ীর পুরাকীর্তি ঢেকে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে মণিপুরি ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন এ রাজবাড়ীতে। পূর্বসুরী রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্ত্তকে স্বর্ণালী স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- একমণ ওজনের মন্দিরের একটি ঘন্টা যার গায়ে মণিপুরি ভাষায় লেখা আছে, ‘‘শ্রীহট্ট কুনোঙ্গী শ্রী মহা প্রভুদা শ্রীলশ্রী পঞ্চযুক্ত মণিপুরে স্বরচন্দ কীর্ত্তি সিংহ মহারাজন্য কৎখিবী সরিকনি ইতিশকাব্দা ১৮০০ তারিখ ১৮ জৈষ্ঠ্য’’।

মণিপুরি সংস্কৃতি সিলেটের সাংস্কৃতিক স্বাতমেত্ম্র্যরই অংশ । দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই সু প্রাচীন, ঐতিহাসিক রাজবাড়ির সংস্কার ও পুরাকীর্তির সংরক্ষণে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।